সম্প্রতি সুস্থ হওয়া কোভিড-১৯ রোগীদের কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ? 

এখন আমরা মোটামুটি কোভিড-১৯  মহামারি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি । লোকরা ধীরে ধীরে এটি সাথে মোকাবিলা করার বিভিন্ন উপায় শিখছে। ভাইরাসটি একবার শরীরের ভিতর প্রবেশ করলে আলাদা ভাবে শুধু শ্বসনতন্ত্রে আক্রমণ করে না, এর সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পরে।

ভারতের ভারানসিতে অবস্থিত ফোর্টিজ নেটওয়ার্কের হিরানান্দি হসপিটালের ইমার্জেন্সি এন্ড ট্রমা বিভাগের প্রধান ড. এমডি শাকিল  বলেন, “ইতালির এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া ৮.৮৭ শতাংশ রোগী এরকম অবসন্নতা ও ডিসপোনিয়া (শ্বাসকষ্ট) অনুভব করেছেন। হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হওয়ার দুই মাস পরেও এটি লক্ষ করা গেছে।”

তিনি আরও বলেন, কিছু রোগী যারা সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন তাদের ডিসচার্জের একদিনের মাথায় অল্প অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাত্রা নিয়ে পুনরায় হাসপাতালে ফিরে এসেছিল । এই রোগীদের কমপক্ষে আরও ১০ দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তাদের অবস্থার উন্নতি হলে আবার ডিসচার্জ করা হয়।

এই সমস্ত রোগীরা ফাইব্রোসিসের মতো বিভিন্ন ফুসফুসের সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ফিরে এসেছিলেন। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে উঠার পরেও কিছু রোগী হৃদপিণ্ডের অক্ষমতা, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রভৃতি জটিলতায় পুনরায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।

ডাঃ শাকিল আরও জানান যে, ভাইরাসটি রক্তকণাগুলিকে সারিবদ্ধ করে এমন আবরণী কোষ গুলিকে আক্রমণ করে থাকে। আর এর ফলে শরীরে অতিরিক্ত রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে।

এই দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি প্রভাবগুলিকে বলা হয়, পোস্ট কোভিড সিনড্রোম। কোভিড-১৯ এর তীব্র পর্যায়টি শেষ হওয়ার পরে, রোগীরা চার  থেকে ছয় সপ্তাহ পরে অলসতা, শরীর ব্যথা এবং চুলকানি গলা জাতীয় লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ফিরে আসেন। রোগীদের মাঝে কিছুটা মানসিক চাপও দেখা যায় যা তাদের উদ্বেগ এবং হতাশার দিকে পরিচালিত করে। এ জাতীয় কেসগুলি নিরীক্ষণ করা এবং রোগীর স্বাস্থ্যের উপর নজরদারী করার জন্য একটি উপযুক্ত ডিসচার্জ পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করা উচিত। তাহলে সময় উপযোগী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

 

কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদেরকে ডাক্তারগণ যেসকল পরামর্শ দিয়ে থাকেন-

প্রতিদিন ঘরের অক্সিজেন চেক করা উচিত, ঘরের বাতাসে অন্ততপক্ষে ৯৪% অক্সিজেন বজায় রাখতে হবে।

অবশ্যই শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করতে।

শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ফারেনহাইটের বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পরিমাপ করুন।

অলসতা, তন্দ্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা এবং ঘ্রাণ বদলে যাচ্ছে কিনা লক্ষ্য রাখুন।

ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোভিড সংক্রামণ শরীরের  রক্তে শর্করার মাত্রা পরিবর্তন করে । তিন দিনের মাঝে একবার কঠোর পর্যবেক্ষণ এবং ডাক্তারের সাথে নিয়মিত পরামর্শ প্রয়োজন।

ত্বরিত উচ্চ রক্ত চাপ সম্পর্কিত জটিলতা এড়াতে উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীদের নিয়মিত রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

ডিসচার্জের সাত দিনের মধ্যে পুনরায় ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথমে সিবিসি, সিআরপির মত রক্ত পরীক্ষা এবং পরবর্তী ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে।

তিন মাস পরে বুকের সিটিস্ক্যান এবং ফুসফুসের সংক্রামণ পরবর্তী অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে।

 

যদি কোন রোগী এ বিশেষ মূল্যায়নগুলি বাদ দেয় তবে তার কি  ক্ষতি হতে পারে?

রুগী ‘সাইটোকাইন স্টোর্ম’ এর মধ্য দিয়ে যেতে পারে, এর ফলে প্রতিরক্ষা কোষগুলোর প্রবাহ বেড়ে যায় এবং ফুসফুসকে রক্ষা করার পরিবর্তে তারা তা আক্রমণ করতে শুরু করে।

রক্তনালীতে ছিদ্র দেখা দিতে পারে বা রক্ত জমাট বাধতে পারে।

রোগীর রক্তচাপ দেখা দিতে পারে এবং অঙ্গ গুলি ব্যর্থ হতে শুরু করতে পারে।

 

ড. শাকিল আরও বলেন, “সাধারণত কোভিড পরবর্তী সময়ে পালমনারি ফাইব্রোসিস, ফুসফুসীয় এম্বোলিজম, রেনাল ব্যর্থতা, লিভারের কর্মহীনতা , অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বাঁধা, তীব্র স্ট্রোক এবং মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন প্রভৃতি জটিলতা দেখা দিতে পারে।”

তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

 

টাইমস/তরী/এনজে

 

https://indianexpress.com/article/lifestyle/health/what-precautions-should-a-recently-recovered-covid-19-patient-take-find-out-6604934/

Share this news on:

সর্বশেষ